যোগাযোগ যখন ইমেইলে-How to Write a Professional Email

Learn with Mithun Kumar-How to write a professional email for effective communication

This post is about how to write a professional email for effective communication.

বর্তমানে সারাবিশ্বে ইমেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ একটি আদর্শ মাধ্যম। তবে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশীরভাগ শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা ইমেইল ব্যবহার করেনা, অনেকে জানেনা, অনেকের ইমেইল আইডিই নেয় ! যারা ইমেইল আইডি আছে সে নিয়মিত সেটা চেক করেনা । দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু প্রফেসরকে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইমেইল করার পরেও কোন উত্তর আসেনা । বেশীরভাগই হয়ত খুলে দেখেনা । আর দেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে যেসব ইমেইল আইডি দেওয়া থাকে সেখানে ইমেইল পাঠানোর চেয়ে অফিসে সরাসরি দেখা করা অনেক ভালো। আমার প্রসঙ্গ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষনা সংস্থাদের বিষয়ে। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের ইমেইল ব্যবহার আর বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইমেইলের ব্যবহারের মধ্যে বলতে গেলে অনেক পার্থক্য। 

নিজের পেশা আর পড়াশোনার বিষয়ে নিয়মিত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরদের সাথে ইমেইলে যোগাযোগ করতে হয়। ২০১৮-১৯ সালের দিককার কিছু ঘটনা বলি, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক প্রফেসরকে ইমেইল পাঠালাম তার কাছে পিএইচডি করার কোন সুযোগ আছে কিনা এটা জানার জন্য। তিনি শীঘ্রয় আমাকে জানিয়ে দিলেন যে তিনি আপাতত এখন নতুন কোন পিএইচডি শিক্ষার্থী নিচ্ছে না তবে তার সহকর্মী আমার গবেষণার বিষয়ে আগ্রহী হতে পারে । এইবলে তার সহকর্মীর নাম আমাকে জানালেন । শুধু তাইনা তাকে পাঠানো আমার ইমেইল তার সহকর্মীকে পাঠালেন আমার যতটুকু যোগ্যতা সে অনুযায়ী সুপারিশ করে। তখন তার ঐ সহকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে আলোচনা করেছিলাম। তিনিও যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমার সাথে আলোচনা করেছিলেন, তার গ্রুপের অন্যান্য সহকর্মীদের সাথে আলচোনার বিষয় আমাকে জানাচ্ছিলেন। দ্বিতীয় ঘটনা, জার্মানীতে এক প্রফেসরকে লিখলাম পিএইচডির জন্য। তিনি আমার আগ্রহের জন্য ধন্যবাদ জানালেন এবং লিখলেন তার গবেষণা এরিয়ার সাথে আমার এরিয়ার শক্তিশালী কোন সম্পর্ক নেই। তবে তার গবেষনা এরিয়ার সাথে খুবই আগ্রহী হলে তাকে একটা রিসার্চ প্রপোজাল পাঠাতে বলেছিলেন আর সেই ইমেইলে তার অন্যান্য সহকর্মীদের একটা লিংক দিয়েছিলেন। পরে তার সাথে পরামর্শ করে তার লিংকে পাওয়া এক সহকর্মীর সাথে যোগাযোগ করে তার সাথে আলচোনা করছিলাম। তৃতীয় ঘটনা হলো, সেই সময় অস্ট্রেলিয়াতে এক প্রফেসরকে ইমেইলে লিখলাম পিএইচডির ব্যপারে। তিনি পরদিন খুব সুন্দর করে জানিয়ে দিলেন তিনি এখন কোন শিক্ষার্থী নিচ্ছেন না। জানালেন যে, "তোমার প্রোফাইল অনেক ভালো তুমি শীঘ্রয় ভালো কোন ল্যাবে সুযোগ পাবে ।" ভবিষ্যতে তিনি কোন শিক্ষার্থী নিবেন কিনা অথবা তার কোন সহকর্মী নিচ্ছে কিনা সেটা জানার জন্য যখন লিখলাম তিনি খুব সুন্দর করে তার এক সহকর্মীর ঠিকানা জানালেন । যে তিনটি দেশের কথা উল্লেখ করলাম সেই তিনিটি দেশই সব দিক দিয়েই উন্নত। এবার আসি নিজ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে । অনেক প্রফেসরকে ইমেইল করেছি বিভিন্ন বিষয়ে । বলতে গেলে ৪ ভাগের ৩ ভাগ বা তারও বেশী ক্ষেত্রেই ইমেইললের উত্তর পাইনি, কিংবা ফোন করে জানাতে হয় যে ইমেইল পাঠিয়েছি ! আন্তরিকতা পরের বিষয়। আবার কিছু প্রফেসর সুন্দর করে উত্তর দিয়েছেন। তারা নিয়মিত একাডেমিয়াতে কর্মঠ। বলতে গেলে তাদের জন্যই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আজও টিকে আছে । 

এবার শিক্ষার্থীদের বিষয়ে আসি, বেশীরভাগ শিক্ষার্থীরাই যতটা না ফেসবুক বা ম্যাসেঞ্জারের নোটিফিকেশন চেক করে তার সিকিভাগ ইমেইল চেক করে কিনা সন্দেহ ! যারা কোন কাজে ইমেইল ব্যবহার করে তাদের অনেকেই ঠিকমত ইমেইল লিখতে পারেনা । তাদের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যেতে চায় কিংবা চ্যালেঞ্জিং জবের চেষ্টা করে তারা অবশ্য নিয়িমিত ইমেইল ব্যবহার করে । 

আসলে ইমেইলের মাধ্যমে সঠিকভাবে যোগাযোগ করা একটা সংস্কৃতি । বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজেদের মধ্যে কিংবা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে ইমেইল যোগাযোগ  বাড়াতে হবে যেমনটি করে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরেরা । সেই সব প্রফেসরেরা কেউ কিন্তু আমাদের চিনে না,  কোনদিন দেখেওনি কিন্তু  প্রফেশনাল ও একাডেমিক সম্পর্ক বজায় রাখছে। দেশকে উন্নত করতে হলে  দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আর এর পরিবেশকে উন্নত করতে হবে। 

বর্তমান সময়ের একটি বড় যোগাযোগ মাধ্যম হলো ইমেইল দৈনন্দিন নিয়মিতভাবে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন কাজে, বিভিন্ন মানুষের সাথে ইমেইলে যোগযোগ করতে হয়। আমাকে পড়াশোনা গবেষণার কাজে দেশে দেশের বাইরের প্রফেসরদের ইমেইল করতে হয়, অফিসিয়াল বিভিন্ন কাজে ইমেইল করতে হয়, ঠিক তেমনি নিয়মিত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কাজে আমাকে ইমেইল করে। এছাড়া SERC এর একটি উদ্যোগ হলো মেম্বারশীপ। একটি নির্দিস্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থী এবং পেশাজীবিদের মেম্বারশীপ প্রদান করা হয়। প্রতি সেশনে মেম্বারশীপ আবেদন যখন চাওয়া হয় তখন ইমেইলে শিক্ষার্থীরা পেশাজীবিরা নিয়োগ কমিটি বরাবর যে ইমেইল করে সেগুলোও নিয়মিত দেখি। দুঃখজনক হলেও সত্য যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এমনকি গ্র্যাজুয়েশনের পরেও  কিভাবে ঠিকমত ইমেইল লিখতে হয় সেটা জানেনা। দেখা যাচ্ছে, কেউ কেউ ইমেইলের সাবজেক্ট লেখেনি, কারো ইমেইল প্রফাইলের উদ্ভট নাম, কারো ইমেইল ঠিকানার নাম আরো ভয়ংকর, ইমেইলে ভিতরে অংশে কোন সম্বোধন নেই, মুল অংশ বিভ্রান্তকর, শেষ অংশেও একই অবস্থা, কেউ কেউ শুধু ডকুমেন্টস যুক্ত করেই পাঠিয়ে দিয়েছে, আর কিছু লেখা নেই। এই বিষয়গুলো কখনোই পেশাদার বা আদর্শ ইমেইলে যোগাযোগ বলা যায়না। বিশ্ববিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের এসব বিষয়গুলো শুরু থেকেই ভালো করে শিখতে হবে। আর যারা দেশের বাইরে যেতে চাও তাদেরকে শুরুতেই বিভিন্ন প্রফেসরদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে ভুলেও এমন করে লেখা যাবেনা তাহলে প্রফেসর না দেখেই রেখে দিবে। অনেক সময় সাবজেক্ট না থাকলে কিংবা উদ্ভট নামের ইমেইল ঠিকানা হলে স্প্যাম ফোল্ডারে চলে যাবে।

ইমেইল প্রোফাইল নাম লেখার ক্ষেত্রে নিজের যে নাম অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যে নাম দেওয়া আছে সেই নামের হতে হবে। কোনভাবেই সপ্নের রাজকন্যা, ইনোসেন্ট বয় কিংবা অমুকের রেসিপি এমন হওয়া যাবেনা। ইমেইল ঠিকানা হওয়া উচিত নিজের নামের সাথে মিল রেখে সংক্ষিপ্ত। ইমেইলের উপযুক্ত সাবজেক্ট লিখতে হবে। সম্বোধনের সময় যাকে লেখা হচ্ছে তার নামের শেষ অক্ষর লেখা যায় যেমন- Dr. হলে Dear Dr. Kumar অথবা না হলে Dear Mr. Kumar কিংবা কোন প্রফেসরকে লিখলে Dr. লিখে নামের শেষ অংশ অথবা সরাসরি Dear Professor লেখা যায় নাম লিখলে অবশ্যই নামের বানান সঠিকভাবে লিখতে হবে। ইমেইলের মূল উদ্যেশ্যসমূহ সঠিকভাবে লেখতে হবে ভিতরের অংশে। পরিশেষে বিদায় জানিয়ে Sincerely বা Regards লিখে নিজের নাম লিখতে হবে।


ইমেইলের উদ্দেশ্যই কিন্তু সঠিক যোগাযোগ স্থাপন করা। তাই ইমেইল লেখার সময় হেলাফেলা করে লিখে পাঠালে যাকে পাঠানো হবে সে ইমেইল দেখেই প্রেরণকারীর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে বুঝে ফেলবে এবং একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে শিক্ষার্থীর উপর। তাই ইমেইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে লেখা উচিত।

0 মন্তব্যসমূহ