Research and Development (R&D) ক্যারিয়ার গড়ার পূর্বশর্ত হলো গবেষণা পদ্ধতি শেখা ও প্রয়োগ করা। এই পোস্টে Research Methodology এর প্রাথমিক ধারণা যেমন- What is research, research project, types of research, fundamental/pure and applied/operational research, hypothesis, research process বিষয়গুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে।
সহজভাবে যদি বলি তাহলে বলা যায়, গবেষণা হচ্ছে পদ্ধতিগতভাবে সমস্যা সমাধানের পদ্ধতি। গবেষণা হচ্ছে পদ্ধতিগতভাবে জ্ঞানের অন্বেষণ করা । এটাকে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার বৃদ্ধি করার জন্য নতুন কিছুকে সৃষ্টি করাকেও বুঝানো হয় ।
আমরা আরও সহজভাবে বলতে পারি, গবেষণা হল নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করার একটি প্রক্রিয়া । বর্তমানে গবেষণা একধরণের ব্যবসা হিসেবেও পরিচিতি লাভ করেছে । বহুমানুষ এর সাথে জড়িত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছে । এই কারনে গবেষণাকে আমরা ভোক্তার প্রয়জনীয়তা মেটানোর জন্য পন্য (জ্ঞান, প্রযুক্তি, কৌশল) উৎপাদন করার প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করতে পারি ।
এটা সব সময় মনে
রাখা উচিত যে, গবেষণার ফলাফল যেমন- থিওরি, সুত্র, মডেল এইগুলো যেকোনো সময় মিথ্যা
প্রমানিত হতে পারে । কারন একজন বিজ্ঞানী যা আবিষ্কার করেন আরেক জন বিজ্ঞানী সেটা
উন্নয়ন করতে পারেন অথবা পুরোপুরি মিথ্যা প্রমানিত করতে পারেন । এই বিষয়ের জন্য
পড়াশোনার একটা বিষয়ও আছে যাকে বলা হয় Falsifiability .
গবেষণা প্রকল্প-Research Project
গবেষণা ও গবেষণা প্রকল্পের মধ্যে পার্থক্য দেখানো যায় । যখন একটি নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট সম্পদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশেষ উদ্যেশ্য সাধনের জন্য বিভিন্ন উপাত্ত ও তথ্য একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় ফলাফলে (থিসিস, রিপোর্ট)রূপান্তরিত করা হয় তখন এই সমগ্র কর্মকান্ডকে আমরা গবেষণা প্রকল্প বলতে পারি ।
Research Process |
বড় গবেষণা
প্রকল্পে একটা গবেষক দল থাকে । প্রকল্পের একজন প্রধান থাকেন যিনি প্রকল্পে নেতৃত্ব
দেন । প্রকল্পের প্রধানকে প্রকল্প পরিচালক অথবা প্রকল্প ব্যবস্থাপক বলা হয় । একজন
দক্ষ প্রকল্প পরিচালক বা প্রকল্প ব্যবস্থাপক একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট
পরিমাণ সম্পদ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে সুষ্ঠুভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করে থাকেন ।
গবেষণার প্রকারভেদ
গবেষণাকে আমরা
সাধারনভাবে দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। যথা-
১)
Fundamental/Pure/Basic Research
২) Applied or Operational Research
১)
Fundamental/Pure/Basic Research
এই ধরনের গবেষণা মুলত কোন তত্ত্বীয় ভিত্তি স্থাপন, উন্নয়ন এবং কোন নতুন বিষয় (Discipline) সৃষ্টি করাকে বুঝায় । উদাহারন হিসেবে আমরা আইনস্টাইনের E=MC2 , নিউটনের মহাকর্ষ সুত্রের কথা বলতে পারি । Fundamental Research এর কাজই মূলত নতুন কোন জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করা যা ব্যবহার করে পরবর্তীতে অন্য আরও অনেক সমস্যার সমাধান করা যায় ।
বর্তমানে এই
ধরনের গবেষণা খুব বেশী হয়না । এই ধরনের গবেষণা দীর্ঘমেয়াদী ও ব্যয়বহুল । তবে উন্নত
দেশের বড় বড় শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে এই ধরনের গবেষণাগুলো হয় ।
আমাদের বাংলাদেশের মত দেশেও হয় কিন্তু তুলনামূলক অনেক কম ।
২) Applied or Operational Research
এই ধরনের গবেষণা বর্তমানে বেশী পরিচালিত হয় । বর্তমান সময়ের সমসাময়িক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে এই ধরনের গবেষণা করা হয় ।
উদাহরণ হিসেবে
বলতে পারি, বিজ্ঞানীদের আবিষ্কৃত বিভিন্ন তত্ত্ব ও সূত্র ব্যবহার করে রকেট উড্ডয়ন,
ক্ষেপানস্ত্র নিক্ষেপণ , মহাকাশ ও পৃথিবী পর্যবেক্ষন প্রভৃতি ।
গবেষণার জন্য কিছু মৌলিক ধারণাসমূহ-Some Fundamental Concept of Research
গবেষণা করার জন্য বেশ কিছু মৌলিক ধারণা (Concept) সম্পর্কে জানতে হয় । তাদের মধ্যে থেকে কয়েকটা আমরা দেখব । সেগুলো হল-
১) Hypothesis
২) Inductive
Process
৩) Deductive
Process
১)
Hypothesis
Hypothesis কে আমরা সহজভাবে বলতে পারি এটা একটা ধারণা যা পরীক্ষা করে দেখা হবে। অবশ্য
সেটা কোন মনগড়া ধারণা না । অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত। পরীক্ষা করার পর সেটা সত্য অথবা
মিথ্যা বলে প্রমানিত হবে । একটা গবেষণা শুরু করার পুর্বে অনেকগুলো গবেষণা প্রবন্ধ,
বই, রিপোর্ট এইসব পড়াশোনা করে গবেষণার জন্য একটা ধারণা লাভ করা যায়, গবেষণা পদ্ধতি
তৈরি করা, কি কি উপাত্ত লাগবে সেই বিষয় নির্ধারন করা হয় । যাকে Literature
Review বলা হয় । এই Literature Review করার
পরে গবেষণার বিষয় সম্পর্কে একটা ধারণা বা পটভুমি তৈরি হয় । এই ভাবে একটা Hypothesis দাঁড় করানো হয় । তবে এই ধারণা হতে হবে নিরপেক্ষ । কোন ধরনের ঝোঁক (Biased)
থাকা চলবে না । এটা হতে হবে পুরোপুরি নিরপেক্ষ ।
একটা Hypothesis এর বেশ কিছু মৌলিক বিষয়ের উপর নজর দেওয়া উচিত । যেমন-
ক) Hypothesis হতে হবে উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পর্যাপ্ত।
খ) Hypothesis অবশ্যই পরীক্ষণযোগ্য (Testable) হতে হবে।
যেমন আমরা যদি
সুন্দরবনের উপর একটা গবেষণা করতে চাই, ধরুন আমাদের গবেষণার শিরোনাম হল Pattern
Recognition and Mapping of Forest Cover Changes in Eastern Sundarban, তাহলে এই বিষয়ে আগে করা কোন গবেষণা প্রবন্ধ, রিপোর্ট, বই প্রভৃতি পড়তে হবে
যাকে বলা হয় Literature Review। এই Literature Review করার পর এই বিষয়ে আমাদের একটা Concept বা ধারণা
তৈরি হবে । Literature Review করতে গেলে আমরা দেখতে পাব যে,
জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাদের জন্য আবাসন কাঠামো, রাস্তাঘাট করার ফলে বনভূমির
পরিমাণ কমে যাচ্ছে, বনভূমি কেটে কৃষি জমি করা হচ্ছে, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও জুলবায়ু
পরিবর্তনের ফলে হিমাবাহ গলে যাচ্ছে এর ফলে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে
সমুদ্রের লবণাক্ত জল সুন্দরবনের ভিতরে প্রবেশ করে উদ্ভিদের মারাত্মক ক্ষতি করছে । উপকূলীয়
এলাকায় সুন্দরবনের অবস্থান হওয়ার জন্য ঘুর্নিঝড়, জলচ্ছাসের মত প্রাকৃতিক দুর্যগের
ফলে সুন্দরবনের উদ্ভিদ নষ্ট হচ্ছে ।
এইসব বিষয়গুলো
জানার পর আমরা ধরেই নিব যে সুন্দরবনের উদ্ভিদ কমে দিন দিন কমে যাচ্ছে । এই যে আমরা
Literature
Review করার পর একটা Concept ধরেই নিলাম যে
সুন্দরবনের বনভূমি ও উদ্ভিদের পরিমাণ অতীতের তুলনায় কমে যেতে পারে অথবা কমে গেছে,
এইটাই হল Hypothesis এবং এইটা এখন পরীক্ষা করে দেখার পালা
আসলে কি ঘটেছে এবং ঘটছে । আমাদের ঐ ধারণা সত্যি হতে পারে আবার মিথ্যাও হতে পারে ।
Hypothesis-কে মূলত তিনভাগে ভাগ করা হয় । যথা-
i)Trial
or Working Hypothesis
ii)
Null Hypothesis
iii)
Alternative Hypothesis
i) Trial or Working Hypothesis
একটা গবেষণা শুরু
হয় Trial
or Working Hypothesis দিয়ে । উপরে উল্লেখিত সুন্দরবনের বনভূমির
পরিমাণ ও উদ্ভিদের পরিমাণ অতীতের চেয়ে বর্তমানে কমে যেতে পারে বা কমে এই গেছে সেটা
Trial or Working Hypothesis । এইটাই পরীক্ষা করে দেখা হবে
আসলে কি হয়েছে ।
ii) Null Hypothesis
Null Hypothesis হল Trial or Working Hypothesis এর একেবারে বিপরীত
কথাবার্তা । এটা Trial or Working Hypothesis কে বিরোধিতা
করে । এই Hypothesis বলবে যে না সুন্দরবনের বনভূমি ও উদ্ভিদ
কমে যায়নি ।
iii) Alternative Hypothesis
Alternative Hypothesis পুরোপুরি Null Hypothesis কে অস্বীকার (Reject)
করবে । অর্থাৎ যখন Working Hypothesis
পুরোপুরি সত্য প্রমাণিত হয় তখন এবং কেবল মাত্র তখনই Alternative Hypothesis গ্রহন (Accept) করা হয় ।
২)
আরোহী পদ্ধতি (Inductive Process)
আরোহী পদ্ধতিতে
অনেকগুলো বিষয় অধ্যায়ন ও পর্যবেক্ষন করার পর সেটাকে সাধারণীকরণ (Generalization)
করে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছান হয় । এই পদ্ধতিতে একজন বিজ্ঞানী বা
গবেষক অনেকগুলো বিষয় অধ্যায়ন (Case study) ও পর্যবেক্ষন করেন
এবং সবশেষে সাধারণীকরণ করেন যা অধ্যায়ন ও পর্যবেক্ষনকৃত বিষয়ের সাথে সম্পর্ক তৈরি
করে ।
একটা সহজ উদাহারণ
দিই-
Inductive Process |
৩) অবরোহী পদ্ধতি (Deductive
Process)
অবরোহী পদ্ধতি শুরু করা হয় কোন সাধারণ
মুলনীতি বা নিয়ম থেকে যা সর্বজন দ্বারা স্বীকৃত সত্য এবং নির্ধারন করা হয় কিছু
বিশেষ বিষয় যা পুরোপুরি ঐ মুলনীতির সাথে মিলে যায় ।
সাধারণীকরণ এমনভাবে করা হয় যা ঐ মুলনীতির
উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যেখানে কারো কোন সন্দেহ থাকেনা সেই বিষয়টা নিয়ে ।
নিচে উদাহারণ লক্ষ করা যাক-
Deductive Process |
পৃথিবীর সকল মানুষ মরণশীল এই কথা সবার
পৃথিবীর মানুষ দ্বারা স্বীকৃত । মিঠুন একজন মানুষ সুতরাং অবশ্যই সে মরণশীল ।
To Register Webinar Click here |
এইতো মোটামুটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করলাম । আশা করি আমার মত যারা নবীন এবং আমার জুনিয়র তাদের কাজে লাগবে । তাহলেই আমার এই শ্রম সার্থক হবে । গবেষণা পদ্ধতির অনেক বই আছে । আমি আমার মত করে লিখে গেলাম । আপনার আরও বেশী জানার জন্য সেই সব বই পড়ে নিবেন ।
আমি নিয়মিত Research Methodology এর উপর ওয়েবিনারে লেকচার দিই। এখানে ওয়েবিনারে যোগ দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন। আর Understanding Research Methods শিরোনামে আমার একটা Online Live Course আছে । বাংলা ভাষায় গবেষনা পদ্ধতি শিখতে এই কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। Understanding Research Methods কোর্সের ভর্তির জন্য এখানে রেজিস্ট্রেশন করুন।
আরো পড়ুনঃ PhD Graduates-দের ধরণ- Types and Activities of PhD Graduates
0 মন্তব্যসমূহ